প্রাদেশিক স্পেশাল
পর্ব ১
----উমম্ একটু খিদে খিদে পাচ্ছে বুঝলি!
----সে তো সবসময়ই পায়। তা কী খেতে ইচ্ছে করছে শুনি?
----কিছু চটপটা টাইপ বুঝলি, চল যাবি? চৌপাটি থেকে খেয়ে আসি।
----তুই তো যাবিই সঙ্গে আমাকেও নিবি। মরব নাকি এই বাজারে?
----সেও ঠিক। রিস্ক আছে, তাহলে? বাট আই নিড
সামথিং চটপটা রাইট নাও। তাহলে কিছু বানিয়ে দিবি?
----চটপটা! উমম... দাবেলি খাবি? পাও আছে বাড়িতে।
----আহা, শুনেই মুখে জল। আচ্ছা বল তো what happen when you eat dabeli?
----কী?
----এটাও জানিস না! It goes straight to da-beli. হি হি!
আকছার টুকটাক খেতে ইচ্ছে করলেই আমরা হয় বাইরে দৌড়োই নচেৎ অমুক অ্যাপে অর্ডার
দিতে বসি। কিন্তু
এই পরিস্থিতিতে সেটা না করে বরং চলুন বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া যাক বেশ কিছু অন্যরকম স্ন্যাকস।
নর্থ ইন্ডিয়াতে বহু বছর থাকার সুবাদে নর্থ ইন্ডিয়ান কুইজিনের হরেক রকম নামী-বেনামী
মানে লোকাল ফুডের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছে। এসব খাবার সব জায়গায় বা অ্যাপে আপনি পাবেন না। সেই তো রাজা সেই তো রানি সেই তো ঘোড়া পক্ষীরাজের
মতো গতানুগতিক না খেয়ে বরং আসুন কিছু অন্যরকম খাবারের গপ্পো শুনি, সঙ্গে তার সঙ্গে
ফাউ হিসেবে থাকবে দাদিমাকে নুশকে’র মতো ছোট ছোট কিছু ঘরোয়া টিপস।
সাধারণত বাইরে ঘুরতে গিয়ে
খুব কম সংখ্যক মানুষজন লোকাল ফুড ট্রাই করে বা সেই গতানুগতিক থোড় বড়ি খাড়ার মতো আমরা
কিছু চেনা কুইজিনের বাইরে সাধারণত যাই না। বরং ঝুঁকে পড়ি চাইনিজ বা ইটালিয়ান খাবারের দিকে। কিন্তু
কখনো ভারতের আনাচেকানাচে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তাঁদের লোকাল ফুড বা পপুলার স্ন্যাকস কী?
আসুন আজ বরং কিছু প্রাদেশিক খাবারদাবারের সঙ্গে আলাপচারিতা সেরে নেওয়া যাক।
প্রত্যেক প্রদেশের কিছু নিজস্ব
ফ্লেভার থাকে। আলাদা স্বাদ, আলাদা মশলা সব মিলিয়ে অন্যরকম খাওয়ার। সেটা
স্ন্যাকস হতে পারে, মেইন কোর্স হতে পারে কিংবা ডেজার্ট। এই সিরিজে
থাকবে সেরকমই কিছু খাবারের খোঁজ। তারই সন্ধান করতে আজ আপনাদের নিয়ে যাব গুজরাটের কচ্ছ জেলায়। দাবেলি
বা কচ্ছি দাবেলি হল আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় একটি স্ন্যাকস। এবার
আসা যাক দাবেলির ইতিহাসে। গুজরাটিতে দাবেলি শব্দের অর্থ
হল দবানা (হিন্দি উচ্চারণে পড়ুন) অর্থাৎ pressed মানে ব্রেডের পকেটে বেশ চেপে চেপে
আলুর ফিলিং ভরতে হয় তবেই না দাবেলি! এবার আসি কী করে বুৎপত্তি ঘটল এই দাবেলির। ইতিহাস বলে ১৯৬০ সালে কচ্ছ জেলার মান্ডবী গ্রামে
Keshavji Gabha Choudasana নামের এক ব্যক্তি প্রথম দাবেলি আবিষ্কার করেন। এই ভাবে
সেই ব্যবসার শুরু। সে সময়ে তিনি প্রতি দাবেলি এক
আনা বা ছ’ পয়সায় বিক্রি করতেন। যেহেতু কচ্ছ জেলায় আবিষ্কৃত তাই
নাম হল কচ্ছি দাবেলি। এখন কেউ কেউ ডবল রোটিও বলে। কেশবজীর সেই দোকান কিন্তু আজও
আছে, তবে তিনি গত হয়েছেন বহু বছর আগে। এ প্রসঙ্গে বলি যারা গুজরাট বেড়াতে যাচ্ছেন বা যাবেন, অতি অবশ্যই কচ্ছি
দাবেলি ট্রাই করবেন।
কচ্ছি দাবেলির মূল উপাদান
হল পাও ব্রেড, আলু, দাবেলি মশলা, বেদানা, রসুনের লাল চাটনি ও চিনেবাদাম। এক কথায়
যাতে বলে অল ইন ওয়ান স্ন্যাকস মানে এতে ঝাল, মিষ্টি, টক আর কুরকুরে---- এই সব ক’টা
টেস্ট ও আলাদা টেক্সচার পাবেন। অনেকে দু’ রকম চাটনি ব্যবহার করেন দাবেলিতে। এক হল
ঝাল ঝাল রসুনের চাটনি আর অন্যটি হল খেজুর ও ইমলির মিষ্টি চাটনি যাতে স্বাদটা পারফেক্টলি
ব্যালেন্স হয়। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক বাড়িতে বসে কচ্ছি দাবেলি বানানোর উপায়:
কচ্ছি দাবেলি:
দাবেলি বানানোর প্রক্রিয়াটি একটু লম্বা তাই বেশ ক’টি ছোট ছোট ভাগে ভাগ
করে নিয়েছি। স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করলেই দেখবেন খুব সহজ অথচ দারুণ মুখরোচক এক রেসিপি।
স্টেপ ১
দাবেলির মশলা:
দাবেলির মশলা কিন্তু ভীষণ জরুরি একটি উপাদান। এর উপর
গোটা রেসিপির ফ্লেভার নির্ভর করে। আজকাল বাজারে অবশ্য কিনতে পাওয়া যায় কিন্তু তাতে ফ্লেভার কম হয় তাই বাড়িতে
বানিয়ে নিন। দেখে নেওয়া যাক কী কী লাগে।
উপকরণ:
গোটা ধনে- ৪ চা চামচ
গোটা জিরে- ১/২ চা চামচ
মৌরি- ১ চা চামচ
লবঙ্গ- ৪ টে
স্টার অ্যানিজ- ১ টা
তেজপাতা- ২ টো
গোটা গোলমরিচ- ১/২ চা চামচ
দারুচিনি- ২ টুকরো
প্রণালী:
খালি কড়াইতে মিডিয়াম ফ্লেমে ভালো করে ওপরের মশলাগুলো ভেজে নিন। মুচমুচে হয়ে এলে আঁচ থেকে সরিয়ে তাতে ৪ চা চামচ
কাশ্মিরী লাল মির্চ, স্বাদমতো বিটনুন ও সাদা নুন, ১ চা চামচ আমচুর পাউডার মিশিয়ে ঠান্ডা
করে নিন মশলা ঠান্ডা হয়ে গেলে তবেই গ্রাইন্ডারে মিহি করে পিষে নিন। লালচে
রঙের দেখতে দাবেলি মশলা রেডি। দাবেলি মশলা কিন্তু শুকনো হয়। গরম থাকতে থাকতে গ্রাইন্ড করলে তা নরম পোস্তর মতো হয়ে যাবে তাই পুরোপুরি
ভাবে ঠান্ডা করে তবেই বাটবেন। বেশি করে বানিয়ে রেখে দিতে পারেন
এয়ার টাইট জারে। পরবর্তী সময়ে বানানোর ক্ষেত্রে
সময় কম লাগবে।
স্টেপ ২
আলুর স্টাফিং বানানোর উপকরণ:
সেদ্ধ করে খোসা ছাড়ানো আলু- ৩-৪ টে
সাদা তেল- ২ চা চামচ
ছাড়ানো বেদানা- ২ বড় চামচ
টুটিফ্রুটি- ২ বড় চামচ (যে কোনো মুদি দোকানে পাবেন)
ফ্রেশ নারকোল কোরা বা ডেসিকেটেড নারকোল- ২ চা চামচ
নুন- স্বাদমতো
ধনেপাতা কুচি- ২ চা চামচ
প্রণালী:
প্যান বা কড়াইতে ২ চা চামচ সাদা তেল গরম করে তাতে ৪ বড় চা চামচ দাবেলি মশলা
দিন। বাকি
মশলা স্টোর করে রাখুন পরবর্তী ব্যবহারের জন্য। দাবেলি মশলা তেলের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে এবার নরম সেদ্ধ করা আলুগুলো দিয়ে
হাতার সাহায্যে ভালো করে ম্যাশ করে দিন। খেয়াল রাখবেন কোনো লাম্প যেন না
থাকে। আলু আর মশলা ভালো করে মিশে ক্রিমি টেক্সচার হয়ে
এলে আঁচ থেকে নামিয়ে একটা প্লেটে চামচের সাহায্যে ছড়িয়ে দিন। এবার
উপর থেকে নারকেল কোরা, কুচোনো ধনেপাতা, বেদানা ও খানিকটা টুটি-ফ্রুটি ভাল করে ছড়িয়ে
দিন। স্টাফিং
তৈরি। প্লেটে
ছড়িয়ে দিতে এই কারণে বললাম যাতে প্রতিটা চামচের গার্নিশিং সহ স্টাফিং ওঠে। বাটি জাতীয় গভীর পাত্রে রাখলে সেটা হবে না তাই
ছড়ানো প্লেট ব্যবহার করবেন।
স্টেপ ৩
রসুনের লাল চাটনি বানানোর উপকরণ:
৩ টে গোটা রসুন নিয়ে সব কোয়াগুলো খোসা ছাড়িয়ে নিন।
কাশ্মিরী লাল লঙ্কার গুঁড়ো- ৩ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা- ২-৩ টে (ঝাল হবে তাই সেই বুঝে মাত্রা বাড়াতে পারেন)
রোস্টেড চিনেবাদাম- ১ চা চামচ
নুন- স্বাদানুযায়ী
লেবুর রস- ১/২ চা চামচ
জল- অল্প
প্রণালী:
গ্রাইন্ডারে সব উপকরণ ঢেলে ভালো করে পিষে নিলেই রসুনের লাল চাটনি তৈরি। খুব ঘন
হবে না কিন্তু।
স্টেপ ৪
১ টা বড় সাইজের পেঁয়াজ বেশ মিহি করে কুচি করে নিন।
১০০ গ্রাম রোস্টেড চিনেবাদামে ১-২ চা চামচ দাবেলি মশলা ও ১/২ চা চামচ লেবুর
রস মিশিয়ে রাখুন।
ফাইনাল স্টেপ
এবার সাজাবার পালা। একটা করে পাও ব্রেড নিন। ছুরি দিয়ে মাঝের থেকে অল্প কেটে নিয়ে পকেট বানিয়ে নিন। পুরোটা
কেটে ফেলবেন না। এবার আঙুল দিয়ে চেপে চেপে ব্রেডের মধ্যের পকেটে জায়গা বানিয়ে নিন। প্রথমে
চামচ দিয়ে দু’ দিকে রসুনের লাল চাটনি লাগিয়ে
তারপর ১ চামচ আলুর স্টাফিং ঢোকান। বেশ চেপে চেপে স্টাফিং ঢোকাবেন। তারপর অল্প কুচো পেঁয়াজ ও মশলা মাখানো চিনেবাদাম দিন। তারপর
আবার এক চামচ আলুর স্টাফিং বেশ চেপে চেপে ঢুকিয়ে দিন পকেটে। এভাবে
প্রত্যেকটা পাও ব্রেডে পকেট বানিয়ে একই ভাবে স্টাফিং ভরে ফেলুন। দাবেলি
তৈরি, এবার তাওয়াতে মাখন দিয়ে দাবেলিগুলো চারপাশ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভালো করে বাটারে সেঁকে
নিন। এবার
গরম গরম দাবেলিগুলো নামিয়ে যে সাইডে আলুর স্টাফিং আছে সেই পাশটা পাতলা সেউ ভুজিয়ার
উপর চেপে ধরুন। সেউ ভুজিয়া চারপাশে আটকে যাবে। ব্যস, গরম গরম দাবেলি পরিবেশন করুন।
কেউ কেউ আবার খেজুর আর ইমলির মিঠা চাটনিও তৈরি করেন। ইমলির ক্বাথ বার করে তাতে গুড় ও দানা ছাড়ানো খেজুরের
টুকরো দিয়ে ফোটান। সঙ্গে স্বাদমতো নুন দিন। ঘন হয়ে এলে ভাজা জিরের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। খেতে টক মিষ্টি হবে। তখন পাও
ব্রেডের এক সাইডে ঝাল ঝাল রসুন চাটনি আর অন্য দিকে খেজুর-ইমলির মিষ্টি চাটনি লাগিয়ে
তারপর ফিলিং ভরে আগের মতন বাটারে টোস্ট করে নেবেন তবে সেটা একান্তই ব্যক্তিগত চয়েজ। দাবেলি
খেতে বেশ চটপটা মানে মুখরোচক হয়। বিভিন্ন টেক্সচার যেমন পাবেন তেমনই টক-ঝাল-মিষ্টির পারফেক্ট কম্বো। নিন এবার
বাড়িতে বসেই আপনি গুজরাটের কচ্ছি দাবেলির মজা নিন। পরবর্তী সংখ্যায় আবার অন্য কোথাও অন্য
কোনোখানে... তব্ তক্ কে লিয়ে খাতে রহিয়ে, খিলাতে রহিয়ে।
Recent Comments: