রেসিপি: দুধ ইলিশ
মানুষ,
পশু, পাখি, গাছপালা সমস্ত জীবের কাছেই সন্তান যেমন মানসিক শক্তির পরিচয় বহন করে
আবার দুর্বলতাও বটে। বাছুরটি ভূমিষ্ঠ হতেই ধবল গাইটি তার সারা দেহ পরিষ্কারে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শত যন্ত্রণায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া মায়ের মুখ সন্তানের আগমনে
খুশিতে ভরে ওঠে। ছোট ছোট ঠোঁটে শুকনো ঘাসপাতা জড়ো করে ছাদের কার্নিশে বাবা পাখি
বাসা বাঁধে, মা পাখি ডিমে তা দিয়ে ছানা পাখিদের জন্ম দেবে বলে। গাছেরাও কাণ্ডের
মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেয় কুসুমকলির বৃন্তে বৃন্তে। এ সংগ্রামে নেই কোনো ক্লান্তি বরং
সন্তানের মুখে কিছু গুঁজে দিতে পারলে আনন্দের সীমা থাকে না বাবা-মায়ের মুখে। মনে
নেই? ঝড়-জলের রাতে একখানি নারকেলের সন্ধান পেয়ে সর্বজয়ার তৃপ্তিভরা মুখখানির কথা।
মাছেদেরও
সেই একই রীতিনীতি। এই ইলিশের কথাই ধরুন না, রথের সময় আসলে তাদের প্রজননের সময়। এই
সময় পুরুষ ও স্ত্রী ইলিশ নোনাজল থেকে মিঠে জলের নদীতে আসে প্রজনন ও ডিম পাড়ার
জন্য। কারণ মিঠে জলে পোনা তাড়াতাড়ি বাড়ে। বাচ্চা বড় হলেই তারা সপরিবারে ফিরে আসে
সাগরে আর এই যাওয়া-আসার পথেই ধরা পড়ে জেলেদের জালে। তবে জলের রূপোলি শস্য যাতে
নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায় তাই দশমীতে মা দুর্গা গাঙে পড়লে আর ইলিশ খাওয়ার নিয়ম নেই।
আবার সরস্বতী পুজোয় তাকে হলুদে সিঁদুরে বরণ করে তোলা হয়। আসলে এই সময়টুকু পোনাদের
বেড়ে ওঠার সময়। প্রকৃতি বাঁচানোর স্বার্থেই এই সংস্কার মেনে চলা হয়।
দুর্গাপুজোর দোরগোড়ায় আমরা। তাই এই মরসুমে এটিই ইলিশের শেষ রেসিপি।
উপকরণ:
ইলিশ মাছ:
ছয় পিস
দুধ: হাফ
কাপ
সরষের
তেল: হাফ কাপ
গোটা সরষে:
হাফ চা চামচ
কাঁচা
লঙ্কা: ৬টা
হলুদ
গুঁড়ো: ১ চা চামচ
লঙ্কার
গুঁড়ো: হাফ চা চামচ
নুন:
স্বাদানুসারে
প্রণালী:
এক চামচ
তেল গরম করে মাছগুলো হালকা এপিঠ ওপিঠ ভেজে নিতে হবে। একটা পাত্রে ফোটানো দুধ, বাকি
তেল, হলুদ, লঙ্কার গুঁড়ো, নুন দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। কড়াইতে মাছ ভাজার
তেলে সরষে ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে মিশ্রণ দিয়ে খানিকটা ফুটে ঘন হয়ে এলে মাছগুলো
দিয়ে দিতে হবে। ভালো করে ফুটিয়ে নিলেই তৈরি দুধ ইলিশ।
গরম ভাত
আর ঝাঁঝালো দুধ ইলিশের ডেডলি কম্বিনেশনে এক-আধ দিন সন্তানের কল্যাণময় ভবিষ্যৎ
কল্পনা করতে করতে ভাবতেই পারি আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ইলিশে। এরেই কয় নাড়ির
টান।