রেসিপি: চিকেন নুডলস কাটলেট
চোখেমুখে বৃষ্টির নরম ছাঁট লাগলেই ঝিম ধরা সন্ধেগুলো কেমন তরতাজা হয়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দু’ লাইন বা চার
লাইনের কাপলেট ছড়িয়ে পড়তে থাকে গুঁড়ো আবিরের মতো। কারো প্রেম, কারো বিচ্ছেদ, কারো অপেক্ষা বিন্দু বিন্দু জুড়ে ভালো লাগার
সিন্ধু তৈরি হয়।
কবির ঘোর ঘনঘটার নিশীথ যামিনী আসার আগেই সান্ধ্যকালীন আবহাওয়া তৈরি হয়ে যায়। আর ঠিক তখনই মনের ভেতর কেউ যেন চা-এর
সঙ্গে ‘টা’ বলে ডেকে ওঠে। আসলে পুরো ঘটনাটাই আপেক্ষিক। একে অপরের সঙ্গে জড়িত। বৃষ্টি, কাপলেট, চা, টা ওরফে কাটলেট পর পর লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে।
ফরাসি শব্দ কোটলেট থেকেই
এই সুস্বাদু কাটলেট শব্দটির উৎপত্তি। সাধারণত মাংস দিয়ে তৈরি, বিভিন্ন মশলা দিয়ে মেখে সেদ্ধ আলুর প্যাটি বানিয়ে
ডিমে ডুবিয়ে ডুবো তেলে ভাজা----- উপমহাদেশে এমনই জানা গেছে কাটলেটের রেসিপি সম্বন্ধে। ইংরেজ ছাড়াও পর্তুগিজরা কলকাতা এবং
পশ্চিম চট্টগ্রামে বসবাস করতে আসেন। সেখান থেকেই আমরা আপন করে নিই এই কাটলেটকে। চলতে থাকে নানারাকম কাটলেটীয় এক্সপেরিমেন্ট। যার মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে ‘কবিরাজি
কাটলেট’।
কবিরাজি শব্দটি এসেছে ইংরেজি
শব্দ কভারেজ থেকে। রান্না করার সময় এই কাটলেটের ওপর আলাদা করে ডিমের প্রলেপ দেওয়া হয় বলে
ইংরেজরা একে কভারেজ বা কভার এগ কাটলেট বলে। তবে এই কবিরাজি কাটলেটের নামকরণ নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ আছে। রবীন্দ্রনাথ পাঁউরুটির গুঁড়োর প্রলেপ দেওয়া কাটলেট পছন্দ করতেন না। তাই বসন্ত কেবিনের হেড কুক কবিকে খুশি
করতে পাঁউরুটির গুঁড়োর বদলে ডিমের প্রলেপ ব্যবহার করেন। রবীন্দ্রনাথ এই কাটলেটটিকে বিশেষভাবে
পছন্দ করে খেতে রাজি হয়েছিলেন বলেই নাকি এর নাম ‘কবি রাজি কাটলেট’। যদিও ব্রিটেনের কভারেজ কাটলেট কম তেলে
ভাজা হয় আর কবিরাজি ভাজার নিয়ম ডুবো তেলে। চেহারাতেও সাদৃশ্য নেই দুজনের।
হঠাৎ বৃষ্টি এলে কাটলেট হতে
পারে ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে। যেমন নুডলস, সামান্য চিকেন, সবজি এসব দিয়ে হতেই পারে চিকেন নুডলস কাটলেট। কী কী লাগবে?
নুডলস সেদ্ধ: ২ কাপ
বোনলেস চিকেন পেস্ট: ৫০০ গ্রাম
গাজর, সবুজ-লাল-হলুদ বেলপেপার, বিনস কুচোনো: ১ কাপ
ডিম: ১টা
রসুন, আদা পেস্ট: ১ চা চামচ
পিঁয়াজ কুচি: ১টা বড়
কাঁচালঙ্কা কুচি: ২টো
নুন, মিষ্টি: স্বাদ অনুসারে
গোল মরিচ গুঁড়ো: এক চা চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো: এক চা চামচ
কর্নফ্লাওয়ার: ২ চামচ
ভাজার জন্য রিফাইন ওয়েল: ডুবো তেলে ভাজার মতো পরিমাণ।
এটি দুই ভাবে তৈরি করা যাবে।
প্রথম প্রণালী: সমস্ত উপকরণ খুব ভালোভাবে মেখে নিয়ে হাতের তালুতে তেল লাগিয়ে
উপকরণটি থেকে লেচি তুলে কাটলেটের আকারে গড়ে ডুবো তেলে ভাজা যেতে পারে।
দ্বিতীয় প্রণালী: ডিম ও কর্নফ্লাওয়ার বাদে সমস্ত উপকরণ মেখে কাটলেটের আকারে
গড়ে ডিমের সাদা অংশ ও কর্ণফ্লাওয়ারের গোলায় ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়োর প্রলেপ মাখিয়ে
ডুবো তেলে ভাজতে হবে।
স্যালাড ও সস বা কাসুন্দিসহ পরিবেশন। ব্যস তারপর ইতিহাস।
কাটলেট মুচমুচ শব্দে মুখের মধ্যে মিলিয়ে যেতে যেতে একলা পথে সেই ইতিহাস
থেকে তুলে আনুক পান্না-চুনি। কিবোর্ড ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ুক রসনার কাপলেট।
Recent Comments: