সে
নব্বইয়ের দশকের কথা। উত্তরাঞ্চলের কোনো এক বাড়ির কর্তার মানকচু দিয়ে খাসির মাংসের ঝোল খুব পছন্দের ছিল। বাড়ির গৃহিণী বাড়ির স্যাঁতসেঁতে, ছায়ায় হয়ে থাকা এই
কচু তুলে আনত। তার মেয়েরা এই মানকচুর গাছের ঢাউস সাইজের পাতার নীচে বসে হাড়ীপাতিল খেলা খেলত। গৃহিণী গ্রীষ্মের দুপুরের গরমে আঁচলে ঘাম মুছতে মুছতে ভাপে এই কচু অল্প সেদ্ধ করে নিত, আর খাসির মাংস আচ্ছা করে কষাত। আগুনের আচে তার ফর্সা মুখটা গোলাপি হয়ে যেত। তার কোনো দিকে খেয়াল থাকত না, মেয়েরা স্কুলে
সেসময়। বাগানের
গন্ধরাজ ফুলগাছটা সাদা হয়ে থাকত ফুলে, যার ঘ্রাণ বাড়ির বাইরে সদর দরজা থেকেও পাওয়া যেত, মেহগনি গাছে বকের বাসায় বকেরা তারস্বরে ডেকে যেত।
গৃহিণী তার বাবার বাড়ি বরিশালে ফেলে আসা স্মৃতি হাতড়ে বেড়াত আর সেই ধাচেই রান্না করত। চুলোয় মানকচু দিয়ে মাংসের ঝোল টগবগ করে ফুটত। এমন সময় ঠিকে ঝি তৈয়বের মা সদর দরজা ঠেলে ঢুকত ঘর মুছতে।
সারাবাড়ি তরকারির ঘ্রাণ তৈয়বের মার নাকেও এসে লাগত, গৃহিণীকে জিজ্ঞেস করত, ভাবীরো কি রান্দুচ্ছু বাড়ে?
এত সুন্দর গন্দ ক্যাম্বা প্যাইচ্ছি, এইগলা তো ক্যাম্বা খাইনি কখনো। গৃহিণী
হাসত, তৈয়বের মার মনের কথা পড়ে ফেলত, ঘর মুছে যাওয়ার সময় তৈয়বের মার হাতে থাকত এক বাটি মানকচু দিয়ে খাসির মাংসের তরকারি।
গৃহিণীর মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরত, খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। গৃহিণী অপেক্ষায় থাকত বাড়ির কর্তার ফেরার। কর্তা ফিরতেন এবং তৃপ্তি নিয়ে ক্ষুধা পেটে গোগ্রাসে খেতেন এই তরকারি।
পেরিয়ে গিয়েছে অনেক অনেক বছর। বাড়ির কর্তা চলে গিয়েছেন সব
লেনদেন চুকিয়ে, গৃহিণীর বেড়েছে বয়স। মেয়েরা বড়
হয়ে গিয়েছে, তারাও এখন মানকচু দিয়ে খাসির মাংস রান্না করতে শিখে গিয়েছে।
সেই বাড়ির কর্তা আর
গৃহিণী আর
কেউ নয়, আমার বাবা-মা।
প্রস্তুতপ্রণালী:
প্রথমে কচু ভাপে অল্প সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর মাংস তেল, হলুদ, মরিচ,
গরম মশলা সহ প্রয়োজনীয় সব
মশলা দিয়ে কষাতে হবে। তেল উপরে উঠে আসলে কচু দিয়ে আবার কিছুক্ষণ কষিয়ে পানি দিয়ে দিতে হবে প্রয়োজন মতো। এরপর সিদ্ধ হয়ে এলে ইচ্ছেমতো ঝোল রেখে নামিয়ে ফেলতে হবে।
Recent Comments: