সাত
মিনিটে লটে মাছের কারি
‘চ্যালেঞ্জ!’ শব্দটি কানে এলেই মনের ভেতরটা কেমন চনমন
করে ওঠে। শিক্ষক ছাত্রকে উজ্জীবিত
করেন জীবনে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সহজপাঠ পড়িয়ে। ছাত্র শোনামাত্রই শিরদাঁড়া সোজা করে বসে। ঊর্ধ্বতন বস ঘুমন্ত কর্মচারীকে জাগিয়ে তোলেন চ্যালেঞ্জের
নামসংকীর্তন গেয়ে। কর্মচারী জেগে থাকেন ততক্ষণ, যতক্ষণ সেই সুর কানে বাজে। এ তো
গেল সাধারণ কিছু উদাহরণ। বৃহত্তর ক্ষেত্রে ‘চ্যালেঞ্জ’ স্বীকৃতি পায়। ‘গিনেস বুক
অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এ নাম ওঠে। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মানের টিভি
শো।
বহু
মতান্তরে বাঙালি এখন দুই প্রকার। এক বাঙাল, দুই ঘটি। আর খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে
বাঙালরা নিজেদের একটু সুপিরিয়র ভেবেই থাকেন। একদা এক ঘটিবাবু, এক বাঙালবাবুকে
শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, ‘আজ গিন্নি লটেমাছটা যা রেঁধেছিল না?’ ভাবটা হুহ আমরাও খাই।
তাই শুনে বাঙালবাবু নড়েচড়ে বসলেন। জিগেস করলেন, ‘পিসগুলো গোটা ছিল নাকি ঝুরো?’
প্রশ্ন শুনে ঘটিবাবুর চোখ কপালে। অত নরম মাছ, সে আবার গোটা থাকে নাকি? বললেন,
‘আমরা ঝুরোই খাই।’ বাঙালবাবু দমফাটা হাসি হাসতে হাসতে বললেন, ‘তোমরা
খেতেই জানো না, চ্যালেঞ্জ! একবার রেঁধে দেখো লটের কারি সাত মিনিটে, একটা পিসও ভাঙা
চলবে না।’ তাহলে বুঝতেই পারছেন
চ্যালেঞ্জের চলাচল কত গভীর। প্রসঙ্গত বলে
রাখি, এই লটে মাছ, ‘লইট্যা’, ‘নীহারি’, ‘বম্বে ডাক’ নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ আমলে
ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে লইট্যা শুঁটকি মালবাহী মেল ট্রেনে বম্বে আসত। সেই থেকেই
ব্রিটিশদের দেওয়া নাম ‘বম্বে ডাক’। ডাক অর্থাৎ মেল। মাছটি সস্তা হলেও
প্রোটিনে ভরপুর। শরীরের হরমোন, এনজাইম, কেমিক্যালের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওস্তাদ এই
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সম্পন্ন লটে মাছ।
আজ তাহলে
হয়ে যাক লটে মাছের কারি।
উপকরণ:
লটে মাছ:
৫০০ গ্রাম (তিন পিস করে কাটা)
সরষের
তেল: তিন চামচ
রসুন
বাটা: দুই চামচ
হলুদ: ১
চামচ
লঙ্কার
গুঁড়ো: ১ চামচ
কাঁচা
লঙ্কা: ৪টে
ধনেপাতা:
সামান্য গার্নিশিংয়ের জন্য
নুন:
স্বাদানুসারে
প্রণালী:
লটে
মাছের পিস ভালো করে ধুয়ে একটা পাত্রে নিয়ে তাতে রসুন বাটা, নুন, হলুদ, লঙ্কার
গুঁড়ো, এক চামচ কাঁচা তেল মাখিয়ে রাখতে হবে। কড়াইয়ে বাকি তেল গরম করে বাটি থেকে
আলতো করে মিশ্রণটি কড়াইয়ে দিয়ে দিতে হবে। এই রান্নায়
খুন্তির কোনো ব্যবহার নেই। ঠিক সাত মিনিট ঢাকা দিয়ে মিডিয়াম আঁচে রান্নার পর তাতে
চেরা কাঁচালঙ্কা ও ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। নামাবার আগে সামান্য কাঁচাতেল
ছড়িয়ে দিতে পারেন।
গরম ভাতে
লটে মাছের কারি যেন আসল অমৃতের স্বাদ। যেহেতু অতিরিক্ত মশলা বা ঘাঁটাঘাঁটি নেই তাই
প্রোটিনের অংশ ভালোভাবেই উপভোগ করা যাবে। ব্যস শুধু গোটা পিস আর সাত মিনিট মাথায়
রাখবেন। চ্যালেঞ্জ কেমন? বানিয়ে ছবি মাস্ট কিন্তু।
Recent Comments: