রেসিপি: হাজীর বিরিয়ানি
দুঃখবিলাসী। স্ত্রীলিঙ্গে দুঃখবিলাসিনী। দ্বিতীয় শব্দের প্রয়োগটিই বেশি দেখা যায়। আসলে কী জানেন তো কিছু ক্ষেত্রে নারীরা একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে বসে থাকে। অমলতাস গাছটির ফাঁকফোকড় দিয়ে সূর্যরশ্মি ছোট-বড় বুদ্বুদের আকার নিয়ে হাওয়ায় দুলছে। মেঘের দল নেমেছে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতযোগিতায়। কেউ সিংহ সাজে তো কেউ দুর্গা ঠাকুর। বেশ মাতন লাগে রঙ্গমঞ্চে। মেঘবালিকাদের ছু্টোছুটিতে কোলাহল শুরু হয়। হঠাৎ আকাশের মুখ গোমড়া হয়। কবি লিখে ফেলেন, ‘এক তাজমহল গড়ো, হৃদয়ে তোমার আমি হারিয়ে গেলে।’ ভীষণ প্রেমের জোয়ারেও যখন তখন ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন। সম্রাজ্ঞী মুমতাজও হাজির হন, শাহজাহানের কাছে তাজমহলের বাসনা নিয়ে। আসলে দুঃখবিলাসিনী হৃদয়ে হারিয়ে যাওয়ার সুর-তাল-সরগম সেই মুহূর্তেই রচনা করে ফেলেছিল। তবে সম্রাজ্ঞী শুধু তাজমহল চেয়ে অমর হলেন তা নয়। একবার তিনি মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। সৈনিকদের স্বাস্থ্যের করুণ অবস্থা দেখে তাঁর হৃদয় ব্যথিত হল। মিলিটারি মেসের বাবুর্চিকে নির্দেশ দিলেন, চাল ও গোশত দিয়ে পুষ্টিকর এমন কোনো খাবার বানাতে যা সৈন্যদের স্বাস্থ্য সজীব করে তোলে। সেদিনের বাবুর্চির তৈরি পুষ্টিকর রসনাটিই আজকের ‘বিরিয়ানি’। এরপর মুঘলরা ভারতবর্ষের যেখানেই বিচরণ করেছে সেখানেই ছড়িয়ে এসেছে বিরিয়ানির স্বাদ ও গন্ধ। ঢাকা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত বিরিয়ানি সেজেছে নানা বৈচিত্র্যে, নানা রকমফেরে।
১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন সাহেব ঢাকা শহরে একটি অনন্য স্বাদের বিরিয়ানি প্রস্তুত করেন। তিন প্রজন্ম ধরে এই বিরিয়ানি এত কদর পায় যে হাজীর বিরিয়ানি এখন ঢাকা শহরের অন্যতম শিল্প। দুঃখবিলাসিনীরা তাদের একচ্ছত্র অধিকারের বাবুর্চিখানায় বানিয়ে ফেলতেই পারেন সেই হাজী সাহেবের বিরিয়ানি ঘরোয়া পদ্ধতিতে।
উপকরণ:
১) মাটন: ৫০০ গ্রাম (ছোটপিস)
২) গোবিন্দভোগচালবাদেরাদুনরাইস:তিনকাপ
৩) সর্ষের তেল: ১ কাপ
৪) সা জিরে: ১ চা চামচ
৫) দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ,
তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা: দুটো করে
৬) পিঁয়াজ কুচি: ১ কাপ
৭) কাঁচালঙ্কা বাটা: ১ চা চামচ
৮) আদা ও রসুন বাটা: ১ চা চমচ করে
৯) জায়ফল, জয়িত্রী, আমআদা, স্টার
অ্যানিস, গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
১০) নুন: স্বাদমতো
১১) ফেটানো টক দই: তিন চা চামচ
১২) কাজু পেস্ট: দেড় চা চামচ
১৩) মাটন সেদ্ধ জল: ৪ কাপ
১৪) দুধ: ২ কাপ
১৫) কাঁচালঙ্কা
সাজানোর জন্য: ৪টে
১৬)
গোলাপ জল ও কেওড়ার জল: ১ চা চামচ
১৭) ঘি:
১ চা চামচ
প্রণালী:
মাটন প্রেশার
কুকারে অল্প নুন দিয়ে দুটো সিটি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। চাল এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে
হবে। পাত্রে তেল গরম করে সা জিরে, গোটা গরম মশলা, শুকনো লঙ্কা দিয়ে সাঁতলে সামান্য
ভাজা গন্ধ এলে পিঁয়াজ কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে
মাটন দিয়ে দিতে হবে। এরপর একে একে কাঁচালঙ্কা বাটা, আদা-রসুন বাটা, জায়ফল-জয়িত্রি
ও অন্যান্য মশলার গুঁড়ো, নুন মিশিয়ে বেশি আঁচে মাংস রান্না করতে হবে। প্রায় পনেরো
মিনিট রান্নার পর ফেটানো দই, কাজু বাটা দিয়ে আবার ঢাকা দিয়ে মিডিয়াম আঁচে কষাতে
হবে আরোপনেরো মিনিট। এরপর মাটন সেদ্ধ জল ও দুধ দিয়ে তারমধ্যে ভিজিয়ে রাখা চাল দিয়ে
দিতে হবে। লো আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে। ভাত ঝরঝরে হয়ে এলে তাতে ঘি, গোলাপ
জল ও কেওড়ার জল মিশিয়ে দিতে হবে। কাঁচালঙ্কা ছড়িয়ে দিতে হবে ওপর থেকে। পাত্রটি
ফয়েল দিয়ে ঢেকে তার উপর ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। গ্যাসে তাওয়া বসিয়ে লো আঁচে
পাত্রটিকে তাওয়ার উপর বসিয়ে মিনিট দশেক দমে রাখলেই তৈরি গরম গরম হাজীর বিরিয়ানি।
হল কিনা?
জাতে দুঃখবিলাসিনী আর তালে আসলি বিরিয়ানি? উলকাঁটায় দুঃখ বুনতে বুনতে নরম মাটন
সহযোগে সুস্বাদু বিরিয়ানির ঘ্রাণ নিয়ে তৃপ্তির চরম শিখরে পৌঁছে যায় মন।
দুঃখবিলাসিনী গেয়ে ওঠে----‘দিল মাঙ্গে মোর!’
Recent Comments: