শীতকাল মানেই
বেশ একটা রঙচঙে অনুভূতি। একশো ওয়াটের বালবের মতো ঝকঝকে রোদ, বাড়ির এক চিলতে বাগানে গাঁদা, ডালিয়া,
চন্দ্রমল্লিকার এক্কাদোক্কা খেলা। কমলালেবু, কেকের চনমনে সুবাস। মনের মধ্যে বেড়াতে
যাওয়া বা নিদেনপক্ষে কাছেপিঠে চড়ুইভাতির একটা অদম্য ইচ্ছে বেড়ে ওঠা। বয়সের তোয়াক্কা না করে রঙিন সোয়েটার-মাফলারে নিজেকে সাজিয়ে
তোলা। লেপ-কম্বলের ওমে যেন প্রিয়জনের আলিঙ্গনের
সুখানুভূতি। এই সবকিছুর প্রভাব গিয়ে পড়ে আমাদের
খাদ্যাভ্যাসেও। বাজারে, বাগানে, ফ্রিজারে বা গ্যাস ওভেনে বসা প্যানে যেখানেই হোক না কেন মাছ-মাংস-সবজি-শাকের বৈচিত্র্য চোখে
আরামের পসরা সাজায়। দেশি বা বিদেশি যে
কোনো আহারেই মন মজে যাওয়া।
আজ তেমনই
এক বিদেশি রেসিপি নিয়ে এলাম। ‘নাসি গোরেং’। ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় খাবার এবং ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় খাদ্য হিসেবেও সমাদৃত ‘নাসি গোরেং’। যার অর্থ হল ফ্রায়েড
রাইস। আগের দিনের লেফট ওভার ভাতকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতেই মূলত
মাংস, সবজি দিয়ে ভেজে সুস্বাদু করে তুলতেই এই রেসিপির উৎপত্তি মনে করা হয়। তবে বিভিন্ন দ্রব্যের ব্যবহারে এই ‘নাসি গোরেং’-এর বিভিন্ন উপাধি জুটেছে। যেমন চিকেন সহযোগে ‘নাসি
গোরেং’কে বলা হয় ‘নাসি গোরেং আয়াম’,
মাটন যুক্ত হলে ‘নাসি গোরেং ক্যাম্বি’,
ডিম সহযোগে ‘নাসি গোরেং তেলুর’, চিংড়ি দিয়ে ‘নাসি গোরেং উদাং’----
এমন অজস্র উপাধি রয়েছে ‘নাসি গোরেং’-এর
ঝুলিতে।
এখন প্রশ্ন
হল ‘নাসি গোরেং’ যদি সাধারণ
ফ্রায়েড রাইসই হয় তাহলে তার বিশেষত্ব কোথায়? আছে, আছে। সয়া সুইট সস ও চিংড়ি মাছ বাটা এই প্রণালীর
প্রধান উপকরণ। তাহলে দেখে নেওয়া যাক কী কী লাগে এই
রেসিপিতে----
গোবিন্দভাগ
চাল বা যে কোনো সরু চাল: দেড় কাপ
বোনলেস চিকেন
একদম ছোট পিস: ৪০০ গ্রাম
সয়া সস: তিন বড় চামচ
চিনি: দু’ চামচ
পিঁয়াজ কুচি: ১টা
রসুন কুচি: পাঁচ কোয়া
শুকনো লঙ্কা
বীজ বের করে রিং করে কাটা (চিলি ফ্লেক্স):
এক চামচ
ডিম: দুটো
চিংড়ি মাছ
বাটা: এক চামচ
নুন: স্বাদানুসারে
পিঁয়াজকলি
রিং করে কাটা: গার্নিশিংয়ের জন্য
রিফাইন্ড
বা অলিভ অয়েল: দু’ চামচ
প্রণালী:
ভাত আগে করে
নিতে হবে অথবা আগের দিনের লেফট ওভার ভাত ব্যবহার করা যাবে। কড়াইয়ে সয়াসস ঢেলে
চিনি দিয়ে ফোটাতে হবে যতক্ষণ না ঘন হয়। নর্মাল চিনির জায়গায়
ব্রাউন সুগারও ব্যবহার করা যায়। ঘন সয়া সুইট সস তৈরি হলে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর কড়াইয়ে তেল গরম করে পিঁয়াজ রসুন চিলি ফ্লেক্স
দিয়ে খানিক ভেজে চিকেনের টুকরোগুলো দিয়ে দিতে
হবে। সামান্য নুন দিয়ে ভাজা ভাজা হলে এক
চামচ সয়া সুইট সস দিয়ে ভাজতে হবে। এরপর একটি ডিম ফেটিয়ে
দিয়ে আরো খানিকক্ষণ ভেজে চিংড়ি মাছ বাটা দিতে
হবে, সব মিশ্রণ ভালোভাবে হলে ভাতটি দিয়ে ভাজতে
হবে আরো খানিকক্ষণ। বাকি সয়া সুইট সস
দিয়ে দিতে হবে, স্বাদমত নুন দিয়ে নাড়তে হবে যাতে
সব ভালোভাবে মেশে। ওপর থেকে পিঁয়াজকলি ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। স্বাদের জন্য গোলমরিচের গুঁড়ো ও অরিগ্যানো এবং অন্যান্য হার্বস
ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। প্লেটে রাইস সাজিয়ে অন্য ডিমটি সানি
সাইড আপ পোচ করে সাজিয়ে দিতে হবে পাশে অথবা রাইসের ওপরে। হোল ফুড ‘নাসি
গোরেং’ হাজির সুদূর ইন্দোনেশিয়ার কিচেন থেকে আপনার টেবলে।
শীত বা গ্রীষ্ম, আবহাওয়া অনুযায়ী অবশ্যই পরিবর্তন হয় মন তবে রান্নাঘরে সবসময়েই
বৈচিত্র্য প্রয়োজন। আসলে পেটে খেলে পিঠে
নয়, মনে সয়। মনই যে আসল মহাশয়।
Recent Comments: